গঙ্গাসাগর… এক অভিজ্ঞতা
” সব সাগর বারবার l
গঙ্গা সাগর একবার … “
বহুদিন থেকেই মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে শুনতে যাওয়ার ইচ্ছে প্রবল হয়ে উঠেছিলো যবে থেকে ক্যামেরা কিনেছি, আর তাতে বারুদ লাগিয়ে দিলো, রিসেন্ট এক এক্সিবিশন l
যখন মানুষ জীবন সাগর সব মিলেমিশে একাকার l
বন্ধুকে নিয়ে লেগে পড়লাম, কবে যাওয়া যেতে পারে, হাতে বেশি সময় নেই l ২-৩ দিন থাকলে ভালো করে উপলব্ধি করা যাবে, তবে প্রত্যেকেরই কর্মব্যস্ত জীবন l তাই ঠিক করা হলো ভোর বেলা বেড়িয়ে রাতে ফেরা যাক তাতে অফিস কামাই করতে হবে না … আবার গঙ্গাসাগর ও দেখা হবে l অ্যালার্ম দিয়ে শুয়ে পড়লাম যদি ও ঘুম আসেনা উত্তেজনায়, এদিক ওদিক করতে করতেই অ্যালার্ম বেজে উঠলো,
নাহ, আর শোয়া যাবে না l দৌড়তে হবে এবার…
৭-১-২৪
স্টেশনে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ৬.৩০ বেজেই গেলো l
ট্রেনের যদি আরো কয়েক মিনিট দেরি আছে l তবু সকাল থেকেই প্রচুর লোক, সকালের ট্রেনে যাতায়াত করেনা এমন যাত্রী বোধহয় নেই, আমরা ছাড়া !
ট্রেন চলছে শহর শহরতলী মফস্বল পেরিয়ে, গভীর থেকে আরো গভীরে l ফ্ল্যাটবাড়ি, এক দুই তিনতলা বাড়ি ছাড়িয়ে বদলে যাচ্ছে আশপাশ, জীবন … এরপর একটা সময় সবুজ সবুজ আর সবুজ l আরো পর কেউ নেই, আশপাশ শুধু ধূ ধূ প্রান্তর l ট্রেন চলেছে শুধু যাত্রীদের নিয়ে l
কোনো এক স্টেশনে বেশ অনেক্ষণ ট্রেন দাড়িয়ে l বিভিন্ন ধরনের খাবার, জিনিসপত্র নিয়ে হকাররা উঠছে, কেনাকাটা চলছে l আমরা ছাড়া আর কেউই বোধহয় সাগরমেলা যাচ্ছে না , নাকি আমদের মতোই মিশে আছে ভিড়ে, বোঝার উপায় নেই l
আরো কিছুক্ষন পর বেশ কয়েকজন উঠলো, পোশাক আশাক বলে দেয় এরা তীর্থযাত্রী l যাক আমরা একা নয় l ক্যামেরা ব্যাগ থেকে বার করে ফেললাম, এদের একটা ছবি হোক l
এর পরের চিন্তা অবশ্যই কোন স্টেশনে নামবো, কাকদ্বীপ না নামখানা! কেউ সঠিক বলতেই পারেনা l যাই হোক উপস্থিত বুদ্ধি অনুযায়ী দ্বীপেই নেমে গেলাম সামনের তীর্থযাত্রীদের ফলো করতে করতে। স্টেশনে নেমে দেখি সাজো সাজো রব, প্রস্তুতি তুঙ্গে …
স্টেশনে নেমেই আরেক সমস্যা, বন্ধুর খুব জোরে ইয়ে পেয়ে গেছে, আর এগোনো যাবে না, যাক স্টেশনে একটা শৌচালয় আছে, যদিও তাতে লাইন, সব কিছুর মতোই এতে বন্ধু লাইন দিলো, আমি আশপাশ একটু হাটতে গিয়ে দেখি এদের, শান্তিপ্রিয়, ঘুমকাতুরে কুকুরদের, খাওয়া ঘুম ছাড়া যাদের কোনো কাজ নেই l ছবি তুলে বুঝলাম, একজনের পায়ের আঙুল গচ্চা গেছে, তবু কি শান্তির ঘুম l আমাদের মতো একদমই না, জীবন সমন্ধে কোনো অভিযোগই নেই…
এরপর টোটো চড়ে গিয়ে নামলাম ভেসেল এর লাইনে, সারি সারি সব মানুষ দাড়িয়ে, এদের টপকে বোধহয় টিকিট পাওয়া যাবে না, ভিড়ে কেউ একজন বললো, ভেসেল নেই আর ! শুনে বন্ধু ফিরে যেতে চাইছে, এরকম হতেই পারে না বলে আমার বিশ্বাস… আর শেষ না দেখে যাওয়ার বান্দা আমি নই, যাই হোক বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা শেষে টিকিট পেলাম, আরো কিছক্ষন পর ভেসেল এর লাইনে …
ভেসেল চড়ে বুঝলাম এ এক অন্য দেশের যাত্রী, বা অন্য দেশের যাত্রাপথে পাড়ি দিয়েছি, সকলেই কমবেশি গান করছে, সকলেই প্রফুল্ল । মহিলারা খঞ্জনি নিয়ে গান করছে অনেকে, “গঙ্গা মাতা কি জয়” এরকম এক গান হরিদ্বারে শুনেছিলাম… এখানে প্রায় সবাই বাংলাতেই গাইছে, এর মধ্যে একজন মধ্যবয়সা কাকিমা আমাদের থেকে সিট চাইলেন, হয়তো আমার আগেই দিয়ে দেওয়া উচিত ছিলো, অন্যসময় হয়তো তাই করতাম, তবু ব্যাগের ভারে এতটা মৃয়মান ছিলাম যে আর… যাই হোক দু পাশ দেখতে দেখতে এগিয়ে চললো ভেসেল, যেদিকে তাকাই জল আর জল, জলের সাথে মিশে গেছে আকাশের সীমানা, জল ছাড়া কোনো কূল নেই, গন্তব্য না…
সরস্বতী পুজোয় এবারে কুল খাইনি,
কিনারায় পৌঁছে দেখি সেখানেও শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি তুঙ্গে, সভ্যতা জেগে উঠছে রঙের প্রলেপ…
এবার অটো খোজার পালা, গন্তব্যে পৌঁছাতে আরো কিছুক্ষন লাগবে । অটো চড়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেখি সেখানে প্রস্তুতি পুরোদমে …
‘ মানুষ দেখো, মানুষ দেখা প্র্যাকটিস করো, তা হলে আর কিছু লাগবে না, চোখ খুলে যাবে…‘
ওয়াটসনকে হোমস্ কখনো বলেছিলেন বোধহয়, মানুষদের দেখে অনুমান করার চেষ্টা করি, কোথা থেকে আসছেন, রুচি, পেশা…
সাগরমাতার সামনে বসা পূর্ন্যাতিদের দেখলাম,
এদের বেশিরভাগ হতদরিদ্র, বিয়েবাড়ি বা কোনো অনুষ্ঠানে আমরা কত কতো খাবার নষ্ট করি, বিশ্বজয়ীর সেই বাণী, ‘ দরিদ্র ভারতবাসী আমার ভাই ‘ মননে যদি নিতে পারতাম তাহলে এভাবে অপচয়…
কথায় শুনেছি বহুদিন যে মহিলারা পুরুষের সমান, এখানে এসে প্রত্যক্ষ করলাম । সাফাই থেকে শুরু করে সব কিছুতেই মহিলারা টক্কর দিচ্ছে পুরুষদের, হয়তোবা একটু এগিয়ে আছেন।
সাধুর ছবি তুলবো ভেবেছিলাম, যেরকম সবাই খোঁজে । তেমন পেলাম কই!
ভক্তি কি আমার জানা নেই, প্রেমের নরম বুঝি!
ভক্ত দেখে ভক্তি বোঝার চেষ্টা শুধু..
ভিতরে ঢুকে দেখি জেলেদের গ্রাম,
যেখানে মহিলা পুরুষ সমান ভাবে কর্মরত । আর দেখি বাচ্চাদের, সামান্য বয়েস হলেই সবাই নৌকায় পাড়ি দিচ্ছে, আর হাঁটার বয়সেই দৌড়ে যাচ্ছে জলের দিকে…
চারদিকে ছড়ানো মাঝিদের জাল l
জল জাল আর আকাশের প্রকৃতি মিলেমিশে থাকে যখন…
ভেবেছিলাম শুধু এক ধর্মের মানুষদের দেখবো, কিন্তু না অন্য ধর্মের মানুষদের ও আনন্দ করতে দেখলাম, ভালো লাগলো… কথায় বলে না ধর্ম যার যার, উৎসব সবার l আর প্রকৃতির মাঝে এবার খুঁজে পেলাম এবার এক কাপলকে, ছবি তুলছি বুঝতে পেরে সরে যাওয়ার আগেই খচাত…
বন্ধুর ফোন আসতে লাগলো, বলছে তাড়াতাড়ি সেন্টারে পৌঁছাতে, অটো পাবা, ভেসেল… মিলিয়ে ট্রেনে উঠতে আরো দেরি, তাই জলদি জলদি করা উচিত l ফিরতে ফিরতে যেটুকু ধরা যায় স্মৃতির ক্যানভাসে, ক্যামেরার উপত্যকায় …
সারাদিনের ধকল বেশ ভালোই গেছে, দিকবিদিক ভুলে ঘুমিয়ে পড়া এই মানুষটিকে দেখে বুঝলাম…
বেলা পড়ে এলো… এবার ফিরতেই হবে l
ঘর ফিরতে ফিরতে আরো কিছু মুহূর্ত সঙ্গী করা… এই আলোছায়া, পেরিয়ে যাওয়া ধ্রুবতারা!
নাহ, আবারো ফিরতে এই সাগরে, ভালোবেসে…
Get Curated Photography Update in Your Mailbox
Join our mailing list to get regular photography updates (not more than 5 in a month).
Thank you for subscribing.
Something went wrong.
We respect your privacy and take protecting it seriously
অপূর্ব লাগলো। গঙ্গা সাগর যাত্রাটা যেন চোখের সামনে দেখতে পেলাম। ছবি ও লেখা মিলিয়ে খাসা হয়েছে। ব্লগ লেখা ও ছবি সাজানোর একটা পাঠ হয়ে থাকবে।
অসংখ্য ধন্যবাদ, চেষ্টা থাকবে 🌻
বেশ সুন্দর 🌿🙌🏼… লেখার সঙ্গে ছবি গুলো দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল আমিও যেনো এই সফরের একজন যাত্রী 💙। বেশ একটা উত্তেজনা কাজ করছিল 😃।
অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই, লিখতে লিখতে আমি ও ফিরে গেছিলাম সেইদিনে 🌻
লেখার সাথে সাযুজ্য রেখে ছবি গুলি প্রাণ প্রতিষ্ঠা করছে বিষয়টির। খানিক ক্ষণের জন্য মিন ওখানে চলে গেছলো। খুব ভালো লাগলো, এভাবেই ভবিষ্যতে আরও অনেক কাজ উপহার হিসেবে দেখতে, পড়তে, জানতে পারব এই আশা রাখি। এগিয়ে চলো “Rishi on Ride “এর Pride হয়ে।
অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই, চেষ্টা থাকবে 🌻
ভালো লাগল। ছবি, লেখা, ছবির বিষয় সুন্দর হয়েছে। গঙ্গাসাগর বলতেই সচরাচর যেমন ছবি দেখা যায় চারপাশে… তার থেকে ছবির বিষয়ের নির্বাচন খানিক আলাদাই মনে হয়েছে আমার।
অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই, যেরকম ছবি দেখি, সেরকমই চেয়েছিলাম, কিন্তু অফিস কামাই করা যাবে না, তাই কয়েকঘণ্টা যাত্রাকালীন যা কিছু ধরে রাখার চেষ্টা, মন ও ক্যামেরার আঙিনায় 🌻
লেখা ও ছবি মিলিয়ে ভালো হয়েছে…শুভেচ্ছা
অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার, যা বললেন মাথায় থাকবে 🌻